অর্থগত দিক থেকে শব্দের শ্রেণীবিভাগ

         অর্থগত দিক থেকে শব্দকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :

যৌগিক শব্দ, রূঢ় শব্দ, যোগরূঢ় শব্দ।

১.     যৌগিক শব্দ : যে শব্দ সমূহের প্রচলিত অর্থ মূল কেন্দ্রিক হয়ে থাকে, সে সব শব্দকে যৌগিক শব্দ বলা হয়। যেমন : পাঠক, ঘুমন্ত, চালক প্রভৃতি।

         বিশ্লেষণ : এখনে উদাহরণে প্রদত্ত শব্দগুলোর মূল যথাক্রমে পাওয়া যায়- পঠ্ (পঠ্ + অক); ঘুম (ঘুম + অন্ত); চল্ (চল্ + অক)। ‘পাঠক’ শব্দের অর্থ - যে পাঠ করে; ‘ঘুমন্ত’ শব্দের অর্থ -ঘুমে রত অবস্থা; ‘চালক’ শব্দের অর্থ- যে চালনা করে। এ শব্দগুলো তাদের মূল-‘পঠ্, ঘুম, চল্’ কেন্দ্রিক অর্থেই প্রচলতি। এ জাতীয় শব্দকেই যৌগিক শব্দ বলা হয়।

২.     রূঢ় শব্দ : যে শব্দসমূহের প্রচলিত অর্থ সে সব শব্দের মূল কেন্দ্রিক নয়, সে গুলোকে রূঢ় শব্দ বলে। যেমন: হাতি, বাঁশি, গবেষণা প্রভৃতি।

         বিশ্লেষণ : উদাহরণে প্রদত্ত শব্দগুলোর মূল যথাক্রমে পাওয়া যায়- ‘হাত + ই = হাতি; বাঁশ + ই = বাঁশি; গো + এষণা = গবেষণা’। শব্দগুলোর অর্থ মূলকেন্দ্রিক নয়। কারণ, ‘হাত’ মানুষের অঙ্গ বিশেষ; ‘বাঁশ’ - বৃক্ষ বিশেষ এবং ‘গো’ - প্রাণী (গরু) বিশেষ। কিন্তু এই সব মূল থেকে গঠিত ‘হাতি’ শব্দের অর্থ- একটি বিশাল প্রাণী; ‘বাঁশি’-বাদ্যযন্ত্র বিশেষ; ‘গবেষণা’- গভীরতম ও ব্যাপক অধ্যয়ন। এ সব শব্দের সাথে মূলশব্দ ‘হাত, বাঁশ, গো’ -এর অর্থের কোনো সামঞ্জস্য নেই। এই শ্রেণীর শব্দকে রূঢ় শব্দ বলা হয়।

আরো কিছু উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলো

         সন্দেশ (মিষ্টান্ন, মূল অর্থ সংবাদ), শুশ্রুষা (রোগীর সেবা, মূল অর্থ শোনার ইচ্ছা), হস্তী (হাতি, মূল অর্থ যার হাত আছে), পাঞ্জাবী (জামা বিশেষ, মূল অর্থ পাঞ্জাবের লোক), মন্ডপ (উৎসবাদির জন্য নির্মিত অস্থায়ী গৃহ বা মন্দির, মূল অর্থ মন্ড পান করে যে), হরিণ (পশু বিশেষ, মূল অর্থ যে হরণ করে), প্রবীণ (বৃদ্ধ, মূল অর্থ বীণাবাদনে দক্ষ), শ্বশুর (স্বামী বা স্ত্রীর পিতা, মূল অর্থ যিনি শীঘ্র খান) ইত্যাদি।  বাংলায় রূঢ় শব্দ অল্পই আছে।

৩.    যোগরূঢ় শব্দ : সমাস নিষ্পন্ন যে সব শব্দের অর্থ সমস্যমান পদসমূহের অনুযায়ী না হয়ে তৃতীয় কোনো অর্থ প্রকাশ করে, সে সব শব্দই যোগরূঢ় শব্দ। যেমন : দশানন, পঙ্কজ, রাজপুত প্রভৃতি।

         বিশ্লেষণ : এখানে ‘দশানন’ (দশ+আনন) শব্দটির অর্থ-‘দশ আনন যার’। সমস্যামান পদ অনুযায়ী -যে ব্যক্তির দশ আনন (মুখ) আছে, সেই দশানন। কিতু শব্দটি সে অর্থে প্রচলিত নয়। কেবল লঙ্কার রাজা রাবণকে বোঝাতে শব্দটি প্রচলিত। ‘পঙ্কজ’ শব্দটির অর্থ - পঙ্কে (কাদায়) জন্মে যা। সমস্যমান পদ অনুযায়ী পঙ্কে জন্মানো সব কিছুই পঙ্কজ হবার কথা। কিন্তু শব্দটি পঙ্কে জন্মানো সব কিছুকে নির্দেশ করে না। কেবল পদ্মফুলকে বোঝায়। তেমন ‘রাজপুত’ শব্দটির অর্থ- ‘রাজার পুত্র’। কিন্তু শব্দটি কোনো রাজপুত্রকে নির্দেশ না করে একটি জাতিকে বোঝায়। এই জাতীয় শব্দকেই যোগরূঢ় শব্দ বলা হয়।

আরো কিছু উদাহরণ নিম্নে দেওয়া হলো

         জলদ (মেঘ, মূল অর্থ যা জল দেয়),

বারিধি (সমুদ্র, মূল অর্থ-বারি ধারণ করে যে),

বীণাপানি (সরস্বতী, মূল অর্থ বীণা ধারণকারী) ,

মন্দির (মূল অর্থ গৃহ, কিন্তু প্রচলিত অর্থ মর্যাদা সম্পন্ন),

সম্ভ্রান্ত (মূল অর্থ সম্যকরুপে ভ্রান্ত, কিন্তু প্রচলিত অর্থ মর্যাদা সম্পন্ন),

মহাজন (মূল অর্থ মহৎ যে জন বা প্রাচীন কবি, কিন্তু প্রচলিত অর্থ ঋণদান করে যে),

ফাজিল (মূল অর্থ পন্ডিত বা বিদ্বান, কিন্তু প্রচলিত অর্থ বাচাল বা বখাটে) ইত্যাদি।

Subject

Bangla