মূর্ধন্য-ণ লেখার নিয়ম:

         তৎসম শব্দে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুযায়ী কয়েকটি নির্দিষ্ট স্থানে
দন্ত্য ন-এর মূর্ধন্য ণ হয়ে থাকে। দন্ত্য-ন-এর জায়গায় মূর্ধন্য-ণ হওয়ার এই নিয়মকে ণ-ত্ব বিধান বলা হয়। যেমন : পরি + নাম + পরিণাম, পরি + নয় = পরিণয়।

         এখানে লক্ষণীয় যে, নাম ও নয় এর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ তে রূপান্তরিত হয়েছে।

         বাংলা বানানের নিয়মে ণ-ত্ব বিধান অনুসরণ করা হয়।

         ণ-ত্ব বিধানের প্রধান নিয়মগুলো এখানে দেখানো হলো :

১.      ঋ (ঋ-কার), র (র-ফলা, রেফ), ষ-এর পর মূর্ধণ্য ণ হয়। যেমন :

         ঋণ            ক্ষরণ              আকীর্ণ           কৃষাণ

         ঋণী            উচ্চারণ            জীর্ণ              কর্ষণ

         ঘৃণা            দারুণ              পূর্ণিমা            ভূষণ

         তৃণ            চারণ              শীর্ণ               বিকর্ষণ

         ‘ক’ ও ‘ষ’ যুক্ত হয়ে যুক্তব্যঞ্জন ক্ষ হয়। এই যুক্তব্যঞ্জনে মূর্ধন্য ষ আছে বলে ক্ষ-এর পরে ন-ধ্বনি থাকলে তা মূর্ধন্য ণ হয়। যেমন : ক্ষণ, দক্ষিণ, ক্ষুণ্ণ, দূরবীক্ষণ, প্রশিক্ষণ, রক্ষণ।

২.      ট-বর্গ (ট ঠ ড ঢ)-এর পূর্বে যুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন :

         কণ্টক          অকুণ্ঠিত        মন্ডলি         বণ্টিত

         ঘণ্টা            উৎকণ্ঠা          প্রচন্ড          কণ্ঠাস্থি

         নিষ্কণ্টক       ভুলুণ্ঠিত         গন্ড            অকালকুষ্মান্ড

৩.      ঋ (ঋ-কার), র (র-ফলা, রেফ), ষ-এর পর যদি স্বরবর্ণ, ক-বর্গ (ক খ গ ঘ ঙ), প-বর্গ (প ফ ব ভ ম) এবং য য় হ ং -এই সব অনুকূল বর্ণের এক বা একাধিক বর্ণ থাকে, তবে তার পরে দন্ত্য-ন থাকলে তা মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন:

         কৃপণ          প্রবণ              প্রাঙ্গণ             নিরূপণ

         দর্পণ           চর্বণ               সর্বাঙ্গীণ           দ্রবণ

         সমর্পণ         শ্রাবণ             গ্রহণ               ক্ষেপণ

         নির্মাণ         রোপণ            শ্রাবণ              ব্রাহ্মণ

         উপরের নিয়ম অনুযায়ী আয়ন শব্দটি থাকলে আয়ন শব্দের দন্ত্য-ন পরিবর্তিত হয়ে মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন:

         উত্তরায়ণ                       চন্দ্রায়ণ

         পরায়ণ                         রবীন্দ্রায়ণ

         সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মে কিছু সাধিত শব্দে এসব বিধান কার্যকর হয় না। ফলে ঐ ধরনের তৎসম শব্দে দন্ত্য-ন বহাল থাকে। যেমন:

         অগ্রনায়ক        ছাত্রীনিবাস              নির্নিমেষ

         হরিনাম          ত্রিনেত্র                   বহির্গমন

         প্রনষ্ট             পরান্ন                    দুর্নীতি

৪.      প্র, পরি, পরা, নির্ -এ চারটি উপসর্গের পর দন্ত্য-ন মূর্ধণ্য-ণ হয়। যেমন:

         পরিণত        পরিবহণ         প্রণত             প্রণিপাত

         পরিণতি       নির্ণয়             প্রণয়              প্রণীত

         প্রবীণ          নির্ণীত           প্রবণ              প্রণিধান

         ব্যতিক্রম : পরিনির্বাণ, নির্নিমেষ, প্রঘণ্ট। পরিবহন বানানও শুদ্ধ। অপর, পরা, পূর্ব, প্র-এই কটি পূর্বপদের পর অহ্ন শব্দ ণত্ব বিধান অনুসারে দন্ত্য ন- এর জায়গায় মূর্ধণ্য ণ হয়। যেমন : প্র + অহ্ন + প্রাহ্ণ, অপর + অহ্ন = অপরাহ্ণ, পরা +  অহ্ন = পরাহ্ণ, পূর্ব + অহ্ন = পূর্বাহ্ণ।

৫.      সংস্কৃত ভাষায় দীর্ঘকাল থেকে কিছু শব্দে মূর্ধন্য-ণ চলে আসছে। এ সব তৎসম শব্দে নিত্য মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন:

       অণু              গণনা              তৃণ               আণবিক

       গণিত           বাণ               কণা              গৌণ

       গণক            জীবাণু            স্থাণু              বেণু

৬.      বাংলা ভাষায় মূল সংস্কৃত (তৎসম) শব্দের মত সংস্কৃত শব্দের পরিবর্তিত রূপেরও ব্যবহার প্রচলিত আছে। এ ধরনের শব্দকে তদ্ভব বা প্রাকৃতজ শব্দ বলা হয়। এ ধরনের শব্দের মূল সংস্কৃত বানানের মূর্ধন্য-ণ এর জায়গায় দন্ত্য ন হবে। যেমন :

         তৎসম        তদ্ভব            তৎসম              তদ্ভব

         এক্ষণ         এখন            কর্ণ                 কান

         কোণ         কোনো          গৃহিণী              গিন্নি

         প্রণাম         পেন্নাম          ঘৃণা                 ঘেন্না

৭.      বিদেশি শব্দে মূর্ধন্য-ণ ব্যবহৃত হয় না। যেমন : ইরান, তুরান, জার্মান, কোরান। বিদেশি শব্দে ট-বর্গের নিয়মও অকার্যকর। যেমন :

         অ্যাকসিডেন্ট                         কন্ট্রোল

         এজেন্ট                                ক্যান্টিন

         পেশেন্ট                               সিমেন্ট

৮.      ত বর্গ (ত থ দ ধ ন)-এর পূর্বে যুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন: গ্রন্থ, বৃন্দ, বৃন্ত।

৯.      সম্মানসূচক ক্রিয়াপদের শেষে মূর্ধন্য-ণ হয় না। যেমন : করেন, ধরেন, করুন, ভরুন।

Subject

Bangla