লাইব্রেরি
প্রিয় শিক্ষার্থী, বাংলা প্রথম পত্রের 'লাইব্রেরি' নামক প্রবন্ধ থেকে প্রশ্নোত্তর আলোচনা করব।

লাইব্রেরি বা পাঠাগার এক নিঃশব্দ জ্ঞানের ভা-ার। পাঠাগারের জন্য পুস্তক নির্বাচনকালে জাতীয় বৈশিষ্ট্য বা জাতীয় সংকীর্ণতার পরিচয় না দেয়াই ভালো। পাঠাগার জাতীয় বৈশিষ্ট্যের রক্ষক নয়, ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যের বিকাশক। আর ভালো পুস্তক লেখক যখন কোনো বিশেষ সম্প্রদায়ের লোক নন, তখন পুস্তক নির্বাচনকালে সংকীর্ণ মনোভাবসম্পন্ন না হওয়াই ভালো।

প্রশ্ন : ক. লাইব্রেরি কত প্রকার?
প্রশ্ন : খ. সাধারণ জনগণের জ্ঞানস্পৃহা মেটানোর জন্য কোন লাইব্রেরি প্রয়োজন?
প্রশ্ন : গ. অন্যান্য পাঠাগারের সঙ্গে সাধারণ পাঠাগারের কী ধরনের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়, আলোচনা কর।
প্রশ্ন : ঘ. জাতীয় জীবনে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা বিশ্লেষণ কর।

উত্তর : ক. লাইব্রেরি তিন প্রকার যথা_ ব্যক্তিগত লাইব্রেরি, পারিবারিক লাইব্রেরি ও সাধারণ লাইব্রেরি।

উত্তর : খ. জনগণের জ্ঞানস্পৃহা মেটানোর জন্য প্রয়োজন সাধারণ লাইব্রেরি। অনেকের পক্ষে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরি করা সম্ভব নয়। তাদের ও সাধারণ জনগণের জ্ঞানস্পৃহা মেটানোর জন্য এ ধরনের পাঠাগারের সৃষ্টি। এ ব্যাপারে দশের মিলিত ফলস্বরূপ যা পাওয়া যায়, তাকেই সাধারণ লাইব্রেরি বা পাঠাগার বলা হয়। এখানে পুস্তক সংগ্রহের ব্যাপারে সমবায়নীতি অনুসরণ করা হয়।

উত্তর : গ. সাধারণ লাইব্রেরি বা পাঠাগার আধুনিক যুগের এক অনন্য সংযোজন। বই জ্ঞানের বাহন হলেও একজনের পক্ষে সব বই কেনা সম্ভব নয়। এটি গড়ে ওঠে সর্বসাধারণের সমষ্টিগত প্রচেষ্টায়। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক লাইব্রেরি থেকে ব্যক্তি নিজে, তার পরিবারের সদস্যরা এবং উত্তরাধিকারীরা উপকৃত হয়। আবার ব্যক্তি ও পারিবারিক পাঠাগার গড়ে ওঠে ব্যক্তি বা পরিবারের সদস্যদের রুচি ও আগ্রহমাফিক। এখানে সাধারণের ইচ্ছা ও রুচির প্রতিফলন ঘটে না। অন্যদিকে, যাদের পক্ষে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি করা সম্ভব হয় না, তাদের ও সাধারণ জনগণের প্রয়োজন মেটানোর জন্য গড়ে ওঠে সাধারণ লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার। এসব গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সাধারণের ভূমিকা ও স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয়। অর্থাৎ, সমবায়নীতিতে সাধারণ গ্রন্থাগার গড়ে ওঠে। বই সংগ্রহে যথাসম্ভব সর্বসাধারণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। কোনো কোনো সাধারণ পাঠাগার ব্যক্তিগত দানের ফলেও গড়ে ওঠে। সেখানে সাধারণের ভূমিকা ও স্বার্থ প্রাধান্য পায়। সাধারণ পাঠাগারের বই নির্বাচনের বেলায় উদার দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন ঘটে।

উত্তর : ঘ. মানবসভ্যতার ক্রম অগ্রগতির ধারায় মানুষের অর্জিত জ্ঞান ও মহৎ অনুভব সঞ্চিত হয়ে থাকে পাঠাগারে। এর মাধ্যমে পূর্বপুরুষের জ্ঞান সঞ্চারিত হয় উত্তরপুরুষের কাছে। তাই জ্ঞানচর্চা, অন্বেষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাঠাগারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
শিক্ষা ছাড়া জাতীয় উন্নতি অসম্ভব। আর শিক্ষার জন্য প্রয়োজন পুস্তক পাঠ এবং জ্ঞানার্জন। শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয় না, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও জ্ঞানার্জনের জন্য প্রচুর বই-পুস্তক পড়তে হয়। গ্রন্থপাঠে ব্যক্তি বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতা ও দক্ষতা অর্জন করে। মানসিক ও আত্মিক উন্নয়নে পাঠাগার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত, সে জাতি তত বেশি উন্নত। নিয়মিত অধ্যয়ন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চা এবং উন্নয়নের মাধ্যমেই এসেছে তাদের এ শ্রেষ্ঠত্ব। পৃথিবীতে যেসব মনীষী অমর হয়ে আছেন, তার মূলে রয়েছে তাদের জ্ঞানচর্চা তথা পুস্তক অধ্যয়ন। অধ্যয়নের মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করেই তারা নিজের বিবেক, বুদ্ধি ও কল্পনাশক্তিকে করেছেন শানিত। আর সেই জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন সারা বিশ্বকে। আর এ জ্ঞানার্জনের পথে পাথেয় হিসেবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে একটি সমৃদ্ধ পাঠাগার।
জ্ঞানার্জন তথা পাঠাভ্যাস ছাড়া কোনো জাতি উঁচু জীবনের অধিকারী হতে পারে না। তাই উন্নত জাতি গঠনে মানসিক ও আত্মিক সাধনা অপরিহার্য। সে ক্ষেত্রে পাঠাগারের ভূমিকা ও অবদান অসামান্য। পাঠাগার তাই জাতীয় বিকাশ ও উন্নতির মানদ-। গ্রন্থাগার ব্যবহার ও বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা ছাড়া জাতীয় চেতনার জাগরণ হয় না।