লক্ষ্য যখন মেডিকেল

আমাদের দেশে সরকারি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে মোট আসন সংখ্যা পাঁচ হাজার আটশত দশটি। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে আসন সংখ্যা দুই হাজার তিনশত দশটি। বেসরকারি মেডিকেলে মোট আসন সংখ্যা তিন হাজার পাঁচশত পঞ্চাশটি। এই আসনের বিপরীতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। যারা কেবল আত্মাবিশ্বাসী আর নিজের মেধাকে সময়মত কাজে লাগাতে পারে তারাই টিকে থাকে ভর্তিযুদ্ধে। মেডিকেলের সেরা ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে কথা বলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার খুটিনাটি লিখেছেন- আলমগীর কবীর।

 ‘মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ, প্রশ্নও টেকনিক্যাল হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীকে ব্যতিক্রমী অনুশীলনের মাধ্যমে প্রস্তুতির বিষয়গুলোকে আত্মস্থ করতে হয়। কেবল আত্মবিশ্বাস আর যথাযথ অনুশীলনের মাধ্যমে মেডিকেলে ভর্তিও সুযোগ পাওয়া সম্ভব- ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী সানজিদা খান এভাবেই মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে নিজের মতামত তুলে ধরলেন।  মেডিকেলে ২য় স্থান অধিকারী আমিনা শরীফ বলেন‘ ফলাফল যতই ভাল হোক না কেন পরীক্ষার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত নিজের প্রস্তুতিকে ধরে রাখতে হবে তা না হলে পিছিয়ে পড়ার সম্ভাবনা বেশি।’ যারা মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ভবিষ্যতের ডাক্তার হিসেবে নিজেদের দেখতে চান এখন থেকেই ভালভাবে প্রস্তুতি শুরু করুন। নিজের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তুলতে হবে। ভাবতে হবে আমার প্রস্তুতি কখনই অন্যদের থেকে কম  হবে না। শুধুই ভাবলেই চলবে না সেই অনুসারে কাজও করতে হবে।

সময় যেন কাজে লাগে :  মেডিকেলে পঞ্চম স্থান অধিকারী শামসুল আরেফিন বলেন ‘ভর্তির জন্য কতক্ষণ পড়তে হবে সেই বিষয়ে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। প্রস্তুতির বেলায় প্রতিটি মুহূর্ত যেন ফলপ্রসূ হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। সময়গুলোকে পাঠ্যবিষয় অনুযায়ী বণ্টন করে নিতে হবে।’ কেবল সময় ব্যয় করলে চলবে না সকল বিষয়কে সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যতটুকু সময় পড়তে হবে তা যেন মনোযোগের সাথে হয়। পুরাতন পড়াগুলো রিভাইজ দিতে হবে। প্রয়োজনে রুটিন করে নিতে হবে। নবম স্থান অধিকারী নিয়ামুল ইসলামের সাফল্যের চাবিকাঠি সময়ানুবর্তিতা। প্রতিটি পড়া তিনি রুটিন অনুসারে সময় করে পড়তেন। রুটিন করা বিষয়ে নিয়ামুলের কথা-‘এলোমেলো না পড়ে অবশ্যই রুটিন করে পড়া উচিৎ কেননা রুটিন করলে পড়াশোনাটা বেশ গোছালো হয়।’

বিষয় অনুসারে প্রস্তুতি: বিষয় অনুসারে প্রস্তুতি প্রসঙ্গে সানজিদা খান বলেন‘ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি টেক্সট বই থেকেও অনেক প্রশ্ন করা হয়। পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান থেকে এই প্রশ্নগুলো করা হয়। এজন্য বইগুলোর প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র সম্পর্কে ধারণাটা পরিষ্কার রাখা জরুরি। কেবল এক  লেখকের বইয়ের ওপর নির্ভর না করে একাধিক লেখকের বই আয়ত্বে রাখতে পারলে নিজের জন্য তা উপকারি।’ ২য় স্থান অধিকারী আমিনা সানজিদা কথার একমত পোষণ করে বলেন ‘টেক্স বইয়ের বিকল্প নেই। টেক্সট বইয়ের খুটিনাটি বিষয় সম্পর্কে ভাল ধারণা থাকা বাঞ্চনীয়, সময় একদম নষ্ট করা যাবে না। টেক্স বইয়ের প্রতি সময় বেশি দিতে হবে। পুরাতন পড়াগুলো বারবার রিভাইজ দিতে হবে।’ টেক্সট বইয়ের পাশাপাশি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান থেকেও প্রশ্ন করা হয়। অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইংরেজি বিষয়কে গুরুত্ব দিতে হবে। কেননা ইংরেজিতে অন্যদের চেয়ে তুলনামূলক ভাল করলে ভর্তিযুদ্ধে নিজের টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। ইংরেজির ব্যাকরণ অংশ যেমন Parts of speech, Sentence, Gender, Number, Articles, Tense, Voice, Transformation of sentence, Narration, Preposition, Tag question, Conditional Sentence, Right form of verbs, Spelling, Antonym-Synonym, Correction, Analogy প্রভৃতি সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখতে হবে। সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতি সম্পর্কে পঞ্চম স্থান অধিকারী শামসুল আরেফিন ‘কোথায় কখন কী ঘটছে এইসব সাম্প্রতিক বিষয়ের ওপর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। রেডিও- টেলিভিশনের খবর শুনতে হবে নিয়মিত। সাধারণ জ্ঞানে ভাল করার জন্য বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন বইয়ের পাশাপাশি বাংলা পিডিয়া,বাংলাদেশের ইতিহাস,ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই,এনসাইক্লোপিডিয়া ও উইকিপিডিয়ার সহায়তা নেয়া যেতে পারে। দৈনন্দিন বিষয়ে ভাল করার জন্য জাতীয় দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ খবর ও সম্পাদকীয় অংশে চোখ রাখতে হবে।’

পরীক্ষার খুটিনাটি: মেডিকেল পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান থেকে ৩০ নম্বরের, রসায়ন থেকে ২৫, পদার্থ বিজ্ঞান থেকে ২০, ইংরেজি থেকে ১৫, ও সাধারণ জ্ঞান থেকে ১০ নম্বরের মোট ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হয়ে থাকে। টেক্সটে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞানেও গুরুত্ব দিতে হবে। কোনো বিষয়কে অবহেলা করা চলবে না। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বইয়ের রেফারেন্স হিসেবে ৪৭ তম স্থান অধিকারী রুবেল বলেন‘ জীববিজ্ঞানের জন্য আজমল, নাসিম বানু, জালাল উদ্দীন আকবর, পদার্থ বিজ্ঞানের জন্য শাহজাহান তপন, ইছহাক ও তোফাজ্জল, রসায়নের জন্য হাজারি ও কবির প্রমুখ লেখকের প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্র বইয়ের পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য বইগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে।’

পরীক্ষার হলে জাদুকাঠি: দশম স্থান অধিকারী কওসীফ তানভীর বলেন ‘অনেকেই পরীক্ষার হলে নার্ভাস হয়ে পড়ে এটা একদমই চলবে না। পরীক্ষার হলে নিজের মনোবল ধরে রাখতে হবে। দেখা যায় অনেকের প্রসত্মুতি ভাল থাকার পরেও পরীক্ষার হলে নার্ভাসনেসের কারণে কাঙিক্ষত ফল লাভ করতে পারে না।’ সানজিদা খান বলেন ‘উত্তর দেয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে উত্তরপত্রে বৃত্ত যেন ঠিকঠাক ভরাট করা হয়। অনেকেই তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে উত্তর পত্রে এক প্রশ্নের উত্তর অন্যবৃত্তে ভরাট করে থাকে। উত্তর দেয়ার সময় প্রশ্নের ধারবাহিকতা লক্ষা করে উত্তর দিতে হবে।’ পরীক্ষার হলে আনকমন প্রশ্ন দেখে একদম ঘাবড়ে না যাওয়ার পরামর্শ আমিনা সরকা পরীক্ষার হলে গিয়ে দু একটা প্রশ্ন আনকমন আসতেই পারে এটা মাথায় রেখে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। আনকমন প্রশ্ন দেখে নিজেকে হতাশ করা যাবে না। এছাড়া ১০০ টি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য ৬০ মিনিট সময় পাবে অর্থাৎ একটি প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য সময় পাবে ৩৬ সেকেন্ড। এই অল্প সময়ের ভেতরে প্রশ্নপড়া ও উত্তরপত্রে বৃত্ত ভরাটের কাজ করতে হবে। প্রতিটি প্রশ্নে সমান সময় ব্যয় করতে হবে। মোট কথা সময়ের প্রতি সচেতন থাকতে হবে। তবে উত্তর দেয়ার সময় সচেতন থাকা জরুরি। কেননা প্রতি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্ত নম্বর থেকে ০.২৫ নম্বর কাটা যাবে।