গ্রামের নাম মেঘলার চর, কিশোর গঞ্জ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর বাঁকে চরের মাঝে একটা ছোট্ট গ্রাম । গ্রামের সবাই মোটামুটি অশিক্ষিত । এর মাঝেই রফিক হামিদ, যার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ কৃষক, চিন্তা করলেন, পড়াশুনা করব । কিন্তু কিভাবে, তার অন্য আরো পাঁচ ভাই ছিল, যারা সবাই মিলে দিনমজুরের কাজ করত । অন্য ভাইরা তার এই গোঁড়ামি মেনে নিতে পারলো না , সাফ সাফ জানিয়ে দিল, পড়াশুনা করলে, বাড়ী থেকে পড়াশুনা করা যাবে না ।

তার বাবা কৃষক বহর উদ্দিন ছিলেন প্রচন্ড রাগী লোক । সাধারণতঃ সবসময় খড়ম পরে বেড়াতেন, রেগে গেলে একদম খড়ম খুলে ছুড়ে মারতেন । তার পঞ্চম ছেলে রফিক হামিদের পড়াশুনার প্রতি আসক্তি তিনি ভালো চোখে না দেখলেও, খুব বেশী বকাঝকা করতেন না ।

তো যাই হোক, রফিক হামিদ মাদ্রাসায় ভর্তি হলেন, ভর্তি হলে কি হবে, বই, খাতা, কলম ইত্যাদি কেনার টাকা কোথায়? আর বাড়ীতে পড়াশুনার কোন উপায় নেই, ভাইরা সামনে পেলেই পিটাতে আসে । উপায়ন্তর না দেখে রফিক ঠিক করলেন, লজিং থাকবেন । ব্যাস, পাশের গ্রামেই লজিং মাষ্টার হিসাবে পড়াশুনা জীবন শুরু করলেন । এই গ্রামের নাম ছিল মাঝগ্রাম, গ্রামটি অনেক বড় হওয়াতে এর বিভিন্ন অংশের বিভিন্ন নাম দেয়া হয়, পশিচম পাড়ার শেষের মাথার জংলাকীর্ণ বাড়ীটায় তিনি প্রথম লজিং জীবন শুরু করলেন ।

কিন্তু লজিং থাকলে কি হবে, লজিং থেকে তো শুধু থাকা ও খাওয়ার বন্দোবস্ত হয়, টাকার বন্দোবস্ত হয় না । তাই রফিক হামিদ কৃষক বাবার কাছে এসে বললেন, "বাবা, মোক কিছু ট্যাকা দেন।" বহর উদ্দিন চেতে গিয়ে বললেন, "কেশের ট্যাকা? ট্যাকা কি মোর বালশের তলত থাকে। পারবেনাও তোক ট্যাকা পাইসা দিবার, যা কাম করেক । " রফিক এবার বলে, "বাবা বই কিন্যার জন্যে দশ ট্যাকা নাগবে "। এবার বহর উদ্দিন কিছুটা শান্ত স্বরে বললেন , "যা পরধানের ভুইত হাল বয়া টেক্যা নিয়া যা" । তখনকার দিনের এক দিনের হালের দাম ছিল পাঁচ টাকা । তাই একটা বইয়ের টাকার জোগান দিতে দুইদিন গরুর হাল বয়ে বইয়ের টাকা জোগাড় করলো রফিক হামিদ ।

(চলবে)